গরু লালন পালনে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির সম্মুখীন হতে হয়, তা হলো কৃমির আক্রমণ। গরুকে এ কৃমির আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন কৃমিনাশক দেওয়া হয়ে থাকে। এ কৃমিনাশক দেওয়ার ফলে গরুর শরীর দূর্বল হয়ে পরে এবং খাবারের রুচি কমে যায়। তাই আমরা অনেকেই জানতে চাই গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় কিনা।
গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় ?
অনেকেই জানতে চান যে গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় কিনা। হ্যাঁ, গরুকে কৃমি ঔষধ দেওয়ার পর ভিটামিন ঔষধ দিতে হয়। কেননা গরুকে কৃমিনাশক ঔষধ দেওয়ার পর খাদ্যে অরুচি দেখা দেয় এবং গরুর শরীর দূর্বল হয়ে যায়। এজন্য গরুকে কৃমি নাশক দেওয়ার পরে ভিটামিন ঔষধ দিতে হয়।
গরুকে কৃমিনাশক দেওয়ার পর যে যে ঔষধ গুলো দিতে হয় তা হলো:
- জিংক সিরাপ ( Zinc Syrup )
- লিভার টনিক ( Liver Tonic )
- ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ( Vitamin B Complex )
ইত্যাদি গরুকে কৃমিনাশক দেওয়ার পর উল্লেখিত এ ঔষধ গুলো খাওয়াতে হবে। সাধারণত কৃমিনাশক দেওয়ার পর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স দিতে হয় এবং লিভার টনিক ও জিংক সিরাপ কৃমিনাশক দেওয়ার ৭ দিন পর খাওয়াতে হয়।
গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি খাওয়াতে হবে ?
উপরে আমরা জেনেছি গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় এ সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি কি খাওয়াতে হবে। গরুকে কৃমিনাশক দেওয়ার পর গরু দূর্বল হয়ে যায় এবং খাবারে অরুচি দেখা যায়। তাই গরুর এ সমস্যা গুলো কাটিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার এবং ঔষধ খাওয়াতে হয়।
গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর যা খাওয়াতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো :
- গরুকে কৃমিনাশক দেওয়ার পর সাথে সাথে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স দিতে হবে।
- কৃমিনাশক দেওয়ার ৬-৭ দিন পর জিংক সিরাপ এবং লিভার টনিক সিরাপ খাওয়াতে হবে।
- গরুকে কৃমি ঔষধ খাওয়ানোর পর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে।
- কৃমিনাশক দেওয়ার পর বেশি বেশি প্রোটিন জাতীয় খাবার দিতে হবে।
- গরুকে কৃমিনাশক দেওয়ার পর পুষ্টিকর খাদ্য যেমন ভুসি,খড়, সবজি জাতীয় ঘাস বা সাইলেস খাওয়াতে হবে।
গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পর উল্লেখিত এ ঔষধ এবং খাবার গুলো পরিমাণ মতো খাওয়ালে দ্রুত সময়ে গরুর দূর্বলতা এবং খাবারে অরুচি দূর হয়ে যাবে।
গরুকে জিংক খাওয়ানোর উপকারিতা।
শুধু কৃমিনাশক দেওয়ার পর গরুকে জিংক সিরাপ খাওয়ানো হয় তা নয়। জিংক সিরাপ গরুর গঠন এবং স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তাই জিংক সিরাপ গরুর ক্ষেত্রে যেকোনো সময়ই খাওয়ানো যেতে পারে। গরুকে জিংক খাওয়ানোর বেশ উপকারিতা রয়েছে তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
জেনে নিন গরুর কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো
গরুকে জিংক সিরাপ খাওয়ানোর উপকারিতা গুলো হলো:
- গরুকে জিংক সিরাপ খাওয়ালে লোম বা দেহের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং মসৃণ হয়।
- জিংক সিরাপ গরুর শারিরীক গঠন এবং হাড় গঠনে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
- জিংক সিরাপ গরুর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলে যার ফলে গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- জিংক সিরাপ গরুর অস্থির বৃদ্ধি এবং ক্ষত দ্রুত নিরাময় করতে সহায়তা করে।
- গরুকে পরিমাণ মতো জিংক সিরাপ খাওয়ালে অধিক দুধ পাওয়া যায় এবং দুধের গুণগত মান বেশ ভালো হয়ে থাকে।
- জিংক সিরাপ খাওয়ালে গরুর হজম প্রক্রিয়া সবসময় স্বাভাবিক থাকে।
গরুকে পরিমাণ মতো জিংক সিরাপ খাওয়ালে উল্লেখিত এ উপকারিতা গুলো লক্ষ্য করা যায়। তবে উল্লেখ্য যে গরুকে সঠিক পরিমানে জিংক সিরাপ খওয়াতে হবে। কেননা অতিরিক্ত জিংক সিরাপ গরুর স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
গরুকে জিংক খাওয়ানোর নিয়ম।
উপরে আমরা জেনেছি গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় এবং গরুকে জিংক খাওয়ানোর উপকারিতা সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো গরুকে জিংক খাওয়ানোর নিয়ম এ সম্পর্কে। সাধারণত গরুর দৈহিক ওজনের উপর নির্ভর করে জিংক সিরাপ খাওয়ানোর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক গরুর দৈহিক ওজন অনুযায়ী কি পরিমাণ জিংক খাওয়াতে হবে।
গরুর জিংক খাওয়ানোর নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো :
- ৩০ কেজি ওজনের বাছুরের জন্য ২০ মিলি জিংক সিরাপ ৫ দিন খাওয়াতে হবে।
- ৫০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ৪০/৫০ মিলি জিংক সিরাপ ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
- ৮০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ৬০/৭০ মিলি জিংক সিরাপ ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
- ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১১০/১২০ মিলি জিংক সিরাপ ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
- ১২০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১৩০ মিলি জিংক সিরাপ ৭ দিন খাওয়াতে হবে।
- ১৫০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১৭০ মিলি জিংক সিরাপ ৭ দিন খাওয়াতে হবে।
এভাবে গরুর ওজন অনুযায়ী উল্লেখিত নিয়ম অনুসারে ৫-৭ দিন জিংক সিরাপ খাওয়াতে হবে।
গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানোর উপকারিতা।
সাধারণত কৃমি ডোজ করানোর পর গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানো হয়ে থাকে। তাছাড়া কোনো কোনো রোগের চিকিৎসার পরে এবং গরু একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় হস্তান্তরের পরেও লিভার টনিক খাওয়ানো হয়ে থাকে। গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানোর বেশ উপকারিতা রয়েছে তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানোর উপকারিতা গুলো হলো:
- লিভার টনিক গরুর খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি এবং মুখের রুচি বৃদ্ধি করতে দারুণভাবে কার্যকরী হয়ে থাকে।
- লিভার টনিক গরুর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে এবং হাড়ের ক্ষয়রোধ ও হাড়ের গঠন মজবুত করে থাকে।
- গাভী গরুকে লিভার টনিক খাওয়ালে দুধের গুনগত মান বৃদ্ধি এবং অধিক দুধ পাওয়া যায়।
- লিভার টনিক গরুর যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে যার ফলে খাবার থেকে পুষ্টি শোষনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- লিভার টনিক মিনারেল এবং ভিটামিনের অন্যতম একটি উৎস যা গরুর পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
- লিভার টনিক গরুর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশলী করে তোলে যা গরুকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা করে।
এছাড়াও লিভার টনিকের আরও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। তবে গরুকে অতিরিক্ত লিভার টনিক খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিমান মতো লিভার টনিক খাওয়াতে হবে।
গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম।
উপরে আমরা জেনেছি গরুর কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় এবং গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানোর উপকারিতা সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে। জিংক সিরাপের মতো লিভার টনিকও গরুর দৈহিক ওজনের উপর ভিত্তি করে খাওয়াতে হবে।
গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো :
- প্রতি ১ লিটার পানিতে ছোট গরুর ক্ষেত্রে ১ মিলি এবং বড় গরুর ক্ষেত্রে ২ মিলি পরিমান লিভার টনিক খাওয়াতে হবে।
- দৈহিক ৩০ কেজি ওজনের বাছুরকে ১৫-২০ মিলি পরিমাণে ৫-৭ দিন লিভার টনিক খাওয়াতে হবে।
- দৈহিক ৫০ কেজি ওজনের গরুকে ৩০ মিলি পরিমাণে ৫-৭ দিন লিভার টনিক খাওয়াতে হবে।
- দৈহিক ১০০ কেজি ওজনের গরুকে ৭০/৮০ মিলি পরিমাণে ৫-৭ দিন লিভার টনিক খাওয়াতে হবে।
- পানির সাথে মিশিয়ে বা খাবারের সাথে মিশিয়ে লিভার টনিক খাওয়ানো যেতে পারে।
এভাবে নিয়ম অনুসারে পরিমাণ মতো লিভার টনিক সিরাপ গরুকে খাওয়াতে হবে।

Hello everyone, I’m Mehedi Hasan — a passionate health content creator and the founder of CMH Healths. Since 2015, I have been researching and writing about health topics with the goal of helping people live healthier and more informed lives. I focus on creating practical, research-based content on health and medicine that empowers readers to make confident, evidence-backed decisions.