বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের লাগাম ছাড়া জীবনযাপন এবং ভেজাল জাতীয় খাদ্যাভ্যাসের কারনে গ্যাস্ট্রিক সকলের মধ্যেই ছড়িয়ে পরছে। কোনো কোনো সময় এ গ্যাস্ট্রিক ঔষধ সেবনের মাধ্যমেও নিরাময় করা যায় না। তবে বেশ কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা গ্যাস্ট্রিক দূর করতে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকরী হয়ে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম গুলো সম্পর্কে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম ।
বর্তমানে ছোট বড় সকলকেই গ্যাসট্রিকের সমস্যায় ভোগতে দেখা যায়। গ্যাস্ট্রিক একটি সাধারণ রোগ হলেও কোনো কোনো সময় তা ভয়াবহ হতে পারে। তাই গ্যাস্ট্রিক হলে আমরা তা দ্রুত নিরাময় করতে চাই। গ্যাস্ট্রিক খুব দ্রুত সময়ে নিরাময় করার একমাত্র কার্যকরী উপায় হলো ব্যায়াম করা। এজন্য আমরা অনেকেই জানতে চাই গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম সম্পর্কে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী ব্যায়াম গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
মালাসানা যোগব্যায়াম
- এই ব্যায়ামটি করতে পজিশন নিয়ে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে পড়ুন।
- এরপর দু’হাতের তালু দু’পায়ের হাটুতে ধরে রাখুন।
- এখন গভীরভাবে নিশ্বাস নিতে থাকুন এভাবে ৫ মিনিট এ মালাসানা ব্যায়ামটি করুন।
অর্ধ আপনাসন ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করতে প্রথমে পিঠের উপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে শুইয়ে পড়ুন।
- এরপর একটি হাটু ভাজ করে বুকের দিকে নিয়ে আসুন এবং এক হাত ব্যবহার করে ধরে রাখুন।
- অন্য পাশের হাত এবং পা সোজা করে রাখুন।
- এভাবে ৩-৪ মিনিট থাকুন।
- এরপর অন্য পাশের হাত পা দিয়ে ঠিক একই ভঙ্গিতে এ ব্যায়ামটি করুন।
- এভাবে তিন বার এ ব্যায়ামটি করুন।
চক্রভাকাসন ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করার জন্য পজিশন নিয়ে দু-হাত এবং হাঁটুর উপর ভর করে চতুষ্পদ জন্তুর মতো ভঙ্গি করতে হবে।
- এর পর ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং পেট ভিতরের রাখার চেষ্টা করুন এবং পিঠ নিচের দিকে নামিয়ে দিন।
- এভাবে এ ব্যয়ামটি প্রতিবার ৫ মিনিট করে ৩-৪ চার বার করুন।
উত্তানপাদাসন ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করতে প্রথমে পজিশন নিয়ে পিঠের উপর ভর দিয়ে শুইয়ে পড়ুন।
- এরপর পা উপরের দিকে উঠিয়ে ২-৩ মিনিট এভাবে রেখে দিন।
- এভাবে ৩ মিনিটে একটি সেট করে ৩-৪ বার এ ব্যায়ামটি করুন।
হাঁটাহাটি করা
- গ্যাস্ট্রিক দূর করতে প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধায় ৩০ মিনিট করে হাটুন।
- এভাবে এক সপ্তাহ নিয়মিত হাটলে গ্যাস্ট্রিক দূর হয়ে যাবে।
- হাঁটাহাটি গ্যাস্ট্রিক দূর করার অত্যান্ত কার্যকারী একটি উপায়।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে উল্লেখিত এ দুটি ব্যায়াম অন্য ব্যায়াম গুলোর তুলনায় বেশ দ্রুত কার্যকরী হয়ে থাকে।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য কোন যোগব্যায়াম ভালো।
এতোক্ষণ আমরা জেনেছি গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম গুলো সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো গ্যাস্ট্রিকের জন্য কোন যোগব্যায়াম ভালো এবং সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। গ্যাস্ট্রিক দূর করতে উল্লেখিত প্রতিটি ব্যায়ামই বেশ কার্যকরী। তবে মালাসানা যোগব্যায়াম এবং অর্ধ আপনাসন ব্যায়াম এ দুটি ব্যায়াম খুব দ্রুত সময়ে গ্যাস্ট্রিক দূর করতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
মালাসানা যোগব্যায়াম
- এই ব্যায়ামটি করতে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে দু’হাত দিয়ে নমস্কারের মতো রাখুন।
- এরপর গভীরভাবে নিশ্বাস নিতে থাকুন এভাবে ৫ মিনিট এ মালাসানা ব্যায়ামটি করুন।
অর্ধ আপনাসন ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করতে প্রথমে পিঠের উপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে শুইয়ে একটি হাটু ভাজ করে বুকের দিকে নিয়ে আসুন।
- এক হাত ব্যবহার করে ধরে রাখুন।
- অন্য পাশের হাত এবং পা সোজা করে রাখুন।
- এভাবে ৩-৪ মিনিট থাকুন।
- ঠিক একই ভঙ্গিতে অন্যপাশের হাত এবং পা দিয়ে এ ব্যায়ামটি করুন।
- এভাবে তিন বার এ ব্যায়ামটি করুন।
পড়ুন: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম
এ ব্যায়াম গুলো গ্যাস্ট্রিক সহ গ্যাস্ট্রিকের তীব্র ব্যথা দূর করতেও বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
ব্যায়াম করলে কি গ্যাসের ব্যথা কমে ?
যদি আপনার জিজ্ঞাসা হয়ে থাকে যে ব্যায়াম করলে কি গ্যাসের ব্যথা কমে কিনা তাহলে তার উত্তর হলো হ্যাঁ ব্যায়াম করলে গ্যাস দূর হওয়ার পাশাপাশি ব্যথাও কমে যায়। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম সম্পর্কে। গ্যাস্ট্রিক হলে উল্লেখিত এ ব্যায়াম গুলো করলে ব্যথার পাশাপাশিগ্যাস্ট্রিকের কারনে হওয়া সকল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ব্যায়াম করলে গ্যাস্টিকের যে যে সমস্যা গুলো দূর হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পাকস্থলীতে জমা হওয়া এসিডের মাত্রা কমিয়ে তোলে।
- যা পেটে গ্যাস হওয়া রোধ করতে সাহায্য করে।
- ব্যায়াম করলে পেটের হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে যার ফলে আমাদের গ্রহণ করা খাবার গুলো দ্রুত হজম হয়।
- যা আমাদের পেটের গ্যাস এবং বদহজম রোধ করে থাকে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে পেটের পেশিগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সঠিকভাবে কাজ করে।
- যা আমাদের পেটের ফোলাভাব এবং গ্যাস কমাতে দারুণ ভাবে কার্যকরী হয়ে থাকে।
তাই গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত হলে তা দূর করতে আমাদের সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করতে হবে।
গ্যাসের জন্য কি বুকে ব্যথা হয় ?
এতোক্ষণ আমরা জেনেছি গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম এবং গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ে কোন কোন ব্যায়াম সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ইত্যাদি সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো গ্যাসের জন্য কি বুকে ব্যথা হয় এ সম্পর্কে। হ্যাঁ গ্যাস্ট্রিকের কারনে বুকে ব্যাথা হয় এবং কখনো কখনো ব্যথা তীব্র হতে পারে।
যখন পেটের মধ্যে অতিরিক্ত গ্যাস জমা হয় তখন তা বুকের মধ্যে চাপ তৈরি করে যার কারনে বুকে ব্যথা শুরু হয়। কোন কোন সময় দেখা যায় গ্যাস্ট্রিকের কারনে বুকে ব্যাথা হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়বা শ্বাসকষ্ট হয়। গ্যাস্ট্রিকের কারনে বুকে ব্যথা হলে তাৎক্ষণিক কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এ ব্যথা দূর করতে পারেন।
বুকে ব্যাথা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:
- একগ্লাস পরিমান পানি কুসুম গরম করে পান করা।
- হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেমন হাঁটাহাটি করা।
- মশলা জাতীয় খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকা।
- হালকা গরম পানিতে আদা এবং লেবুর রস মিশিয়ে তা পান করা।
- পুদিনা পাতার চা খাওয়া এটি গ্যাস দুর করতে বেশ কার্যকরী।
- তেলহীন খাবার গ্রহন করা।
গ্যাস্ট্রিকের কারনে বুকে ব্যথা হলে উল্লেখিত এ উপায় গুলো অবলম্বন করে সহজেই বুকের ব্যথা দূরকরতে পারেন।
কি কি খাবার খেলে গ্যাস কমে যায় ?
গ্যাস কমাতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম এর পাশাপাশি বেশ কিছু খাবার রয়েছে যা পেটের গ্যাস দূর করতে বেশ কার্যকরী। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবার খেলে গ্যাস কমে যায়।
গ্যাস কমানোর খাবার গুলোর না নিচে উল্লেখ করা হলো:
আদা চা
আদা চা পেটের গ্যাস কমাতে দারুণভাবে কার্যকরী হয়ে থাকে। পরিমান মতো গরম পানিতে কয়েক টুকরো আদা দিয়ে মিশিয়ে তা পান করুন কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কার্যকারিতা দেখতে পাবেন।
পুদিনা পাতার রস
পুদিনা পাতা দু’ভাবে খেতে পারেন এক হলো পুদিনা পাতার চা। অন্যটি হলো পাতা থেকে রস বের করে সরাসরি খেতে পারেন। পুদিনা পাতা গ্যাস দ্রুত গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
তুলসি পাতার রস
অনেক পূর্বে থেকেই গ্যাস দূর করতে তুলসি পাতার রস পান করা হয়। প্রথমে এক মুঠো তুলসিপাতা নিয়ে তা পিশে তার থেকে রস বের করে তা সরাসরি খেতে পারেন। কিংবা তুলসি পাতার চা সেবন করতে পারেন।
কাঁচা পেঁপে
পেটের গ্যাস দূর করে পেঁপে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। পেটে গ্যাস হলে কাঁচা পেঁপে টুকরো করে কেটে তা খেতে হবে এবং খুব দ্রুত সময়ে এর কার্যকারীতা দেখতে পাবেন।
টক দই
পেটে গ্যাস হলে টক দই খেতে পারেন। কেননা টক দই খেলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী খাবার।
কারো পেটে গ্যাস হলে বিভিন্ন ব্যায়াম এর পাশাপাশি উল্লেখিত এ খাবার গুলোর যেকোন একটি খেতে পারেন। তাহলে খুব দ্রুত সময়ে গ্যাসের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ গুলো কি ?
এতোক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম এবং কি কি খাবার খেলে গ্যাস কমে ইত্যাদি সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো গ্যাস্ট্রিক হলে কোন কোন লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় সে সম্পর্কে। গ্যাস্ট্রিক হলে তা বিভিন্ন লক্ষণ এবং প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। নিচে গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- পেটের মধ্যে ব্যথা করা বা পেটের উপরের অংশে জ্বালাপোড়া হওয়া।
- পেট অস্বাভাবিক ভাবে ফোলে যাওয়া।
- খাওয়ার পরে এবং খালি পেটে বমি বমি ভাব হওয়া।
- পেটে অ্যাসিডিটি হওয়া।
- গ্যাসের কারনে বুকে চাপ হওয়া যার কারনে বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট হওয়া।
- পেটের মধ্যে ভারী ভারী ভাব অনুভূত হওয়া।
- খাবারের প্রতি অনিহা এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দেওয়া।
- পেটে গ্যাস হলে ঘন ঘন হেঁচকি আাসা।
- গ্যাসের কারনে পিঠে তীব্র ব্যথা হওয়া।
উল্লেখিত লক্ষণ গুলো কারো মাঝে প্রকাশ হলে বুঝতে পেটে গ্যাস হয়েছে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি।
গ্যাস্ট্রিক হলে আমরা তা নিরাময় করতে অনেকেই বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই গ্যাস্ট্রিক দূর করতে পারি। চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে।
নিচে গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো উল্লেখ করা হলো:
- ব্যায়াম করা।
- হাঁটাহাটি করা।
- গ্যাস্ট্রিক রোধী খাবার খাওয়া।
- ফল ও শাকসবজি খাওয়া।
- আদা চা বা লেবুর চা পান করা।
- তুলসি পাতা এবং পুদিনা পাতা চা পান করা।
গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত হলে উল্লেখিত পদ্ধতি এবং খাবার গুলো সঠিক নিয়মে সেবন করলে খুব দ্রুত সময়ে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিক দূর করার ব্যায়াম ।

Hello everyone, I’m Mehedi Hasan — a passionate health content creator and the founder of CMH Healths. Since 2015, I have been researching and writing about health topics with the goal of helping people live healthier and more informed lives. I focus on creating practical, research-based content on health and medicine that empowers readers to make confident, evidence-backed decisions.