এলার্জি দেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর একটি রোগ। এলার্জি হলে আমাদের শরীরে মারাত্মক চুলকানির সৃষ্টি হয় এবং এ থেকে ত্বকে ফুসকুড়ি পরে যায়। যার ফলে আমাদের বেশ সমস্যায় পরতে হয়। এলার্জি জনিত খাবার গুলোর মধ্যে ডাল অন্যতম। তবে সব ডালে এলার্জি থাকে না। আমরা সবথেকে বেশি মসুর ডাল খেয়ে থাকি। তাই আমাদের অনেকেরই জিজ্ঞাসা মসুর ডালে কি এলার্জি আছে কিনা।
মসুর ডালে কি এলার্জি আছে ?
আমরা সাধারণত যে ডাল প্রতিদিন বা মাঝে মধ্যে আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখি তা হলো মসুর ডাল। তাই অনেকেই মসুর ডালে কি এলার্জি আছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে চান। হ্যাঁ মসুর ডালে এলার্জি রয়েছে। অন্যান্য ডালের তুলনায় মসুর ডালে একটু বেশিই এলার্জি রয়েছে।
এক কথায় বলতে গেলে মসুর ডালে প্রচুর পরিমানে এলার্জি রয়েছে। যাদের আগে থেকেই এলার্জি রয়েছে তাদের মসুর ডাল খাওয়া পরিহার করাই উত্তম। কেননা মসুর ডাল খাওয়ার ফলে শরীরে এলার্জির প্রতিক্রিয়া বেশ মারাত্মক হয়ে থাকে। যে য়ে লক্ষণ গুলো দেখে বুঝতে হবে যে মসুর ডাল খাওয়ার ফলে শরীরে এলার্জি হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মসুর ডালের এলার্জির প্রতিক্রিয়া গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রচুর চুলকানি হওয়া
- চুলকানির ফলে র্যাশ পরে যাওয়া।
- ত্বকে ফুসকড়ি পরা।
- নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়া।
- বার বার অনবরত হাঁচি আসা।
- কাশি হওয়া।
- পেটে তীব্র ব্যথা করা এবং ডায়রিয়া হওয়া।
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া।
মসুর ডাল খাওয়া পরে যদি আপনার মাঝে উল্লেখিত লক্ষণ গুলোর একটি প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে আপনি এলার্জি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন।
মসুর ডালের ক্ষতিকর দিক।
মসুর ডাল খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি মসুর ডালের ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। মসুর ডাল হলো একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। এটি শরীরের জন্য প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ যোগান দেওয়ার দারুণ একটি উৎস। তবে মসুর ডাল অতিরিক্ত পরিমানে খেলে শরীরে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
মসুর ডালের ক্ষতিকর দিক গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
- মসুর ডালের মধ্যে প্রচুর পরিমানে লকটিন থাকে।
- তাই মসুর ডাল অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরের হজমশক্তি অনেকটা দূর্বল হয়ে পরে।
- যার কারনে বদ হজম হয়ে থাকে।
- মসুর ডালে এলার্জির পরিমাণ বেশি থাকে।
- তাই মসুর ডাল অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে প্রচুর চুলকানির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- কোনো ব্যক্তি যদি পূর্বে থেকে বাতের ব্যথায় ভুগে থাকেন তাহলে মসুর ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- কেননা মসুর ডাল শরীরের ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যার ফলে বাতের ব্যথা তীব্র হতে পারে।
- মসুর ডালে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকার কারনে এটি অতিরিক্ত খেলে অনবরত শরীরের ওজন বাড়তে শুরু করে।
- মসুর ডালে ফাইবার থাকার কারনে এটি অতিরিক্ত খেলে তা থেকে পেটে গ্যাস হয়ে যায় এবং এর পাশাপাশি অ্যাসিডিটিও হয়ে থাকে।
- অতিরিক্ত পরিমানে মসুর ডাল খেলে কিডতে সমস্যা হয়ে থাকে।
- কেউ যদি দৈনিক ৪০-৫০ গ্রামের বেশি মসুর ডাল খায় তবে তার কিডনিতে ক্ষতিকর প্রভাব পরতে পারে।
তাই আমাদের মসুর ডাল সহ সব ধরনের খাবারই পরিমান মতো গ্রহন করতে হবে।মসুর ডালে কি এলার্জি আছে
মসুর ডাল বেশি খেলে কি রোগ হয় ?
উপরে আমরা জেনেছি মসুর ডালে কি এলার্জি আছে এবং এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো মসুর ডাল বেশি খেলে কি রোগ হয়। আমরা সকলেই জানি যে মসুর ডাল একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে মসুর ডাল অতিরিক্ত খেলে বেশ কিছু রোগ হয়ে থাকে। তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মসুর ডাল অতিরিক্ত খেলে যে রোগ গুলো হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মসুর ডালে প্রচুর পরিমানে ফাইবারের উপস্থিতি থাকার কারনে গ্যাসট্রিক হয়ে থাক যা দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়ে থাকে।
- অতিরিক্ত মসুর ডাল খেলে আমাদের কিডনিতে ক্ষতিকর প্রভাব পরে।
- মসুর ডালের মধ্যে অক্সালেটের উপস্থিতির পরিমান বেশি হওয়ার কারনে এথেকে কিডনিতে পাথর হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত মসুর ডাল খাওয়ার ফলে গাঁটি ব্যথা হয়ে থাকে।
- কেননা মসুর ডালে প্রচুর পরিমানে ইউরিক এসিড থাকে আর তাই এ ডাল অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে এ এসিডের পরিমান বেড়ে।
- যায় যার আমাদের গাঁটে ব্যথা হয়ে থাকে।
- মসুর ডালে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন রয়েছে যার কারনে এটি অনবরত শরীরের ওজন বৃষ্টি করতে থাকে।
তাই অতিরিক্ত মসুর ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া পরিমান মতো মসুর ডাল খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি খাদ্য দ্রব্য।
প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয় ?
মসুর ডাল অত্যান্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলের মতো পুষ্টিকর উপাদান। তাই মসুর ডাল পরিমান মতো খেলে আমাদেরকে স্বাস্থ্যবান হতে সাহায্য করে। অনেকের প্রশ্ন থাকে যে প্রতিদিন মসুর ডাল খেলে কি মোটা হয়।
পড়ুন: স্কিন এলার্জি ঔষধের নাম কি
এর উত্তর হলো হ্যাঁ,নিয়মিত মসুর ডাল খেলে এর মধ্যে থাকা প্রোটন আমাদের শরীরের দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করে থাকে। তবে মসুর ডাল পরিমান মতো গ্রহন করলে স্বাস্থ্য এবং দেহের গঠন সুন্দর হয়ে উঠে। মসুর ডাল খাওয়ার বেশ কিছু পুষ্টিকর উপকারিতা রয়েছে।
মসুর ডালের পুষ্টিকর উপকারিতা গুলো হলো:
পেশী গঠন
মসুর ডাল আমাদের শরীরে প্রোটিন যোগানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তাই প্রতিদিন পরিমান মতো মসুর ডাল খেলে তা আমাদের পেশী গঠন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ
মসুর ডাল ফাইবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ফাইবার আমাদের গ্রহন করা খাদ্যে হজম প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ কররে। তাই পরিমান মতো মসুর ডাল খেলে পেটের হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে এবং খাবার গ্রহণের পর অধিক সময় পেট ভরা থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত মসুর ডাল খেলে যেমন ওজন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ঠিক তেমনি পরিমান মতো মসুর খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও থাকে। কেননা মসুর ডালে ক্যালোরির পরিমান সীমিত তাই এটি শরীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
মসুর ডাল গ্রহনে উল্লেখিত এ উপকারিতা গুলো পেতে হলে এটি পরিমান মতো গ্রহন করতে হবে। মসুর ডালে কি এলার্জি আছে
মসুর ডাল বাটা মুখে দিলে কি হয় ?
উপরে আমরা আলোচনা করেছি মসুর ডালে কি এলার্জি আছে এ সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো মসুর ডাল বাটা মুখে দিলে কি হয় এ সম্পর্কে। মসুর ডাল আমাদের শরীরের জন্য যেমন উপকারী একটি খাদ্য দ্রব্য ঠিক তেমনি আমাদের ত্বকের জন্যেও এটি বেশ উপকারী।
মসুর ডালে থাকা প্রোটিন আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে থাকে। মসুর ডালের সাথে আরও কয়েকটি উপাদান নিয়ে তা এক সাথে পেস্ট করে একটি ফেস প্যাক বানিয়ে নিতে পারি। এরপর তা আমাদের ত্বকে প্রয়োগ করতে পারি।
যেমন :
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
যাদের ত্বক সবসময় শুষ্ক কিংবা শুকনো থাকে তারা মসুর ডাল এবং মধুর সংমিশ্রণ করে ক্রিমের মতো বানিয়ে তা ত্বকে প্রয়োগ করতে পারেন। এতে করে এটি ত্বককে কোমল ও সতেজ করে তোলে। এ প্যাকটি বেশ কয়েকদিন প্রয়োগ করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠে। এ প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে এভাবে ১০-১২ দিন এটি প্রয়োগ করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে।
মুখের ব্রন এবং কালো দাগ
মুখের ব্রন এবং রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করতে মসুর ডালের সাথে বেসন ও টক দই মিশিয়ে তা প্রয়োগ করতে পারেন। প্রাথমে এক চা চামচ পরিমান দই ও বেসনের সঙ্গে পরিমান মতো মসুর ডালের বাটা মিশিয়ে তৈরি করে নিতে হবে এ প্যাকটি।
এ প্যাকটি এক সপ্তাহ নিয়মিত মুখে প্রয়োগ করলে ব্রনের দাগ এবং রোদে পোড়ার দাগ দূর হতে শুরু করবে।
দিনে কতটুকু মসুর ডাল খাওয়া উচিত ?
আমাদের অনেকে জিজ্ঞাসা থাকে যে দিনে কতটুকু মসুর ডাল খাওয়া উচিত। এর উত্তর হলো দিনে ৫০ গ্রামের বেশি ডাল খাওয়া উচিত। কেননা ডালের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন,প্রোটিন এবং ফাইবারের মতো পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ উপাদান। যা আমাদের শরীরে পরিমানের চেয়ে বেশি হলে বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
যার মধ্যে প্রধান প্রতিক্রিয়া হলো শরীরে এলার্জির আক্রমণ। তাই আমাদের কারোর মসুর ডাল যদি অধিক প্রিয় খাবার হয়ে থাকে তাহলে তাকে এটি পরিমান মতো গ্রহন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে দৈনিক ৫০/৬০ গ্রামের বেশি মসুর ডাল গ্রহন করছেন কিনা। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে পরিমান মতে মসুর ডাল গ্রহন করুন।মসুর ডালে কি এলার্জি আছে
মসুর ডালে কি ভিটামিন কে বেশি ?
এতোক্ষণ আমরা জেনেছি মসুর ডালে কি এলার্জি আছে এবং দিনে কতটুকু মসুর ডাল খাওয়া উচিত ইত্যাদি সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো মসুর ডালে কি ভিটামিন K বেশি। যদি এটি আপনার প্রশ্ন থাকে তাহলে তার উত্তর হলো মসুর ডালে ভিটামিন K এর পরিমাণ খুবই অল্প ।
মসুর ডাল হচ্ছে প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং বিভিন্ন বি ভিটামিন যেমন ভিটামিন বি১, বি৬ ইত্যাদির গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ভিটামিন K মূলত সবুজ শাক সবজিতে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
মসুর ডাল কি হার্ট ভালো করে ?
মসুর ডালে প্রচুর পরিমানে আয়রন এবং পটাসিয়াম রয়েছে যা আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক এবং রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। যা আমাদের হার্টে জন্য খুবই উপকারী। তাই বলা যায় যে মসুর ডাল হার্টের জন্য অনেক উপকারী একটি খাদ্য দ্রব্য।
তাছাড়া ডাক্তাররা যাদের মধ্যে হাইপার টেনশন থাকে তাদের দৈনিক মসুর ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মসুর ডাল গ্রহনের পূর্বে মনে রাখতে হবে এটি দৈনিক পরিমান মতো গ্রহন করতে হবে বা গৃরহনের পরিমান ৫০ গ্রামের মধ্যে থাকতে হবে।

Hello everyone, I’m Mehedi Hasan — a passionate health content creator and the founder of CMH Healths. Since 2015, I have been researching and writing about health topics with the goal of helping people live healthier and more informed lives. I focus on creating practical, research-based content on health and medicine that empowers readers to make confident, evidence-backed decisions.